একা একা কিভাবে কম খরচে দেশ-বিদেশ ঘুরবেন?
উত্তর খুব সিম্পল – আপনার ট্রাভেল টেষ্ট বদলান।
যদি খরচ কমাতে চান তাহলে সাধারণ একটা কনসেপ্ট মাথায় রাখেন, যে আপনি ঘুরতে আসছেন আরাম-আয়েস করতে নয়।
নিচে কয়টা পয়েন্ট উল্লেখ করেছি যেগুলো ফলো করলে আপনি কম বাজেটের মধ্যেই আপনার জার্নী শেষ করতে পারবেন।
*****এয়ার টিকিট
টিকিটের দাম নির্ভর করে সময়ের উপরে। ধরেন আপনি যখন চায়না যাবেন ঠিক তখন চায়নাতে নিউ ইয়ার হবে।আর এই সময়ে খুব স্বাভাবীক ভাবেই আপনার মত আরো অনেকেই চায়না যাওয়ার প্লান করতেছে।এখন কথা হচ্ছে চাহিদা যেখানে হবে দামও সেখানেই হবে।এমতাবস্থায় আপনার উচিত সেই টিকিটটি ২-৩ মাস আগে কেটে রাখা।
এছাড়া শনিবার-রবিবার প্রায় সকল দেশেই সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।ট্রাভেল ডেট সামনে থাকা অবস্থায় শনিবার-রবিবার মিলায়ে টিকিট কাটলে দাম একটু বেশী পরবেই।
এখানেও উচিৎ ২-৩ মাস আগে টিকিট কেটে রাখা।
টিকিট কাটার জন্য অনেক এপ্স আছে -কিছু বিশ্বস্ত ota হচ্ছে trip. com / kiwi. com /Expedia.com/ ইত্যাদি।টিকিট কাটার সময় ভিন্ন ভিন্ন সাইটে যাচাই করে দেখবেন, দাম কিছুটা হলেও তারতম্য থাকে।এছাড়া আপনি ওয়ান ওয়ে রুট দিয়েও ট্রাই করতে পারেন।দাম যাচাই এর জন্য বেষ্ট ota হচ্ছে kayak/sky scanner (এরা থার্ড পার্টি হিসবে কাজ করে)
এছাড়া আপনি এয়ারলাইন্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও কাটতে পারেন,যেখানে আপনি মেম্বার হয়ে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেন।যে পয়েন্ট দিয়ে আপনি ভবিষ্যতে টাকা ছাড়াই টিকিট কাটতে পারেন।এটা অবশ্য যারা ফ্রিকুয়েন্ট ট্রাভেল করে তারাই ব্যবহার করে।
একটা জরুরি কথা – ভিসার জন্য যে টিকিট লাগে সেটা আপনি অনলাইন থেকে বিনা পয়সায় পাবেন না।অনেক এয়ারলাইন আছে যারা টিকিট হোল্ড করে রাখে ২৪/৪৮ ঘন্টা তবে সেটাও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।
আর হ্যা চেকিং ব্যাগেজ দিলে নরমালি এয়ার ফেয়ার বেশী আসে তাই বাজেট নিয়ে ঘুরতে চাইলে ব্যাকপ্যাক ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে।লাগেজ নিয়ে বাজেট ট্রাভেল করা যায়না।
আমি ২০১৯ সালের দিকে – সিউল-জাকার্তা-মালাং-সিয়াপ রিয়েপ- ব্যাংকক-ইয়াংগুন-হ্যানয়-সিউল রুটের টিকিট কেটেছিলাম মাত্র ৭২০০০০ উওন দিয়ে যেটা বাংলা টাকায় ৬০০০০ এর মত আসে।২/৩ দিন ঘাটাঘাটি করে ভিন্ন ভিন্ন এপ্স দিয়ে এই রেট মিলাইছিলাম।
*****বাসস্থান
আপনি যেকোন দেশেই ডরমিটরি অথবা হোষ্টেল পাবেন।এইসবে থাকার খরচ খুবই কম।উদাহরণ সরুপ ধরুন আপনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৩ রাত থাকবেন, এখন ব্যাংককে অনেক ধরনের থাকার অপশন আছে।তিন তারকা হোটেলে থাকলে আপনার ৩০-৪০ ডলার খরচ হবে নরমালি সেখানে হোষ্টেল অথবা ডরমিটরিতে থাকলে আপনার ৫-৮ ডলার খরচ হবে।
আমাদের আসলে হোষ্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা নাই এজন্য হয়তো ভাবি যে যদি মাল-সামান চুরি হয়ে যায়।আসলে ডরমিটরিগুলোতে ১/২ টা পারসোনাল লকার থাকে, একটাতে আপনি আপনার ব্যাগ রাখতে পারবেন আর আরেকটা তে আপনি আপনার মূল্যবান জিনিস রাখতে পারবেন।
এছাড়া আপনি নতুন নতুন মানুষের সাথে কমিউনিকেশন করার বড় একটা সুযোগ পাবেন,যেটা হোটেলের বদ্ধ রুমে পাবেন না।
প্রায় ডরমিটরিতে খাবার জন্য হালকা-পাতলা স্ন্যাকস ও থাকে।তাছাড়া ট্যুর বাস/গ্রুপ ট্যুর লন্ড্রি সার্ভিস ইত্যাদি সুবিধাও এগুলোতে পাবেন।
আসলে থাকবেন কই এটা ডিপেন্ড করে কই যাইতাছেন তার উপর।যদি স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে “বালি” যান তাহলে আমি কখনোই সাজেষ্ট করবো না হোষ্টেলে থাকতে।একা গেলে মেইন ট্যুরিস্ট এড়িয়া বাদ দিয়ে থাকার ট্রাই করেন, ভাড়া কম পাবেন।
***** খাবার-দাবার
আমরা যে কোন দেশে গেলেই বাংলা খাবার খুজি, এখন বাংলা খাবার খুজলে খরচ বেশি হবেই।বিদেশে এক বেলার বাংলা খাবারের খরচ দিয়ে আপনি লোকাড ফুড কম হলেও দুই বেলা ট্রাই করতে পারবেন।লোকাল ফুড ট্রাই করেন, স্ট্রিট ফুড ট্রাই করেন তাইলেই খরচ কমে যাবে।যেসব দেশে বাংলাদেশী বেশী যেমন সিঙ্গাপুর, মিডলইস্ট, মালয়েশিয়া এসব দেশে আবার বাংলা খাবারের দাম কম।
লোকাল ফুড ট্রাই করাটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা, আর ভ্রমণ করতে গিয়ে যদি অভিজ্ঞতাই না নিতে পারেন তাহলে সেই ভ্রমণের সার্থকতাই নাই আমার মতে।রুচিতে প্রবলেম হলে ভেজিটেবল/এগ ফ্রাইড রাইস খান, যেটা কিনা প্রায় সব দেশেই পাবেন।যাওয়ার আগে অনলাইনে একটু ঘাটলেই ওই দেশের খাবারের নাম পাবেন।আগেই ঠিক করে রাখেন কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে।
আর হ্যা – বিদেশে গিয়া নাইট ক্লাবে ঢুকবেন তাইলে তো ভাই খরচ হবেই।
***** যাতায়াত
যাতায়াতের ক্ষেত্রে টেক্সি এড়িয়ে চলুন।টেক্সি মানেই অতিরিক্ত খরচ।লোকাল ট্রান্সপোর্ট ইউজ করলে খরচ কমে যায়।প্রায় সকল দেশেই ট্যুরিস্ট পাস পাওয়া যায় যেটা কিনা ১/৩/৭ বিভিন্ন মেয়াদে পাবেন।উন্নত অনেক দেশে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড দিয়েও ভাড়া দিতে পারবেন।আর এইসব কার্ড এয়ারপোর্ট থেকে কিনবেন না, এয়ারপোর্টে নরমালি এসব কার্ডের দাম বেশী রাখে।
ট্যুরিস্ট সেন্টার অথবা কনভিনিয়েন্স স্টোর থেকে কিনলে দাম একটু কম পরে।যেসব দেশে লোকাল ট্রান্সপোর্ট কম সেখানে আপনি বাইক ভাড়া করে ঘুরতে পারেন যদি আপনার কাছে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে।অনেক জায়গায় আবার লাইসেন্স ছাড়াও বাইক ভাড়া নেয়া যায়।বাইক ভাড়া করার ক্ষেত্রে আপনার ডিপোজিট রাখতে হয় অথবা পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।আর হ্যা বাইক ভায়ারা নেয়ার আগে অবশ্যই সেই বাইকের একটা ভিডিও করে রাখবেন, ঝামেলা থেকে বাচার জন্য।
আর যদি ট্যাক্সি নিতেই হয় তবে এপ্স ইউজ করার ট্রাই করেন।বিভিন্ন দেশে Uber,grab, Go-Jek ইইত্যাদি আছে যা আপনি মোবাইল এপ্স দিয়েই ইউজ করতে পারবেন।
আরো একটা পয়েন্ট, আর সেটা হচ্ছে – ধরুন আপনি একা একা ফিলিপাইন গেলেন এখন আপনি দুই দিনের জন্য শহরের বাহিরে যাবেন সেক্ষেত্রে একা একা গেলে অনেক খরচ হয়ে যাবে।আপনি ওই দেশে লোকাল কোন গ্রুপের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করলে খরচ একটু হলেও কমে যাবে।ফেসবুকে ওই দেশের উক্ত স্থানের জন্য অনেক ইভেন্ট পাবেন, আপনি যাওয়ার আগেই সেই ইভেন্টের সাথে যোগাযোগ করে রাখলে কম খরচে শহরের বাহিরে গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন।
এগুলো আপনি যাওয়ার আগে অনলাইন থেকে রিসার্চ করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
***** ইন্টারনেট
ইন্টারনেট সাথে থাকলে আপনার সময় বেচে যাবে।এই ইন্টারনেট সিম এয়ারপোর্ট থেকে না নিয়ে অফিসিয়াল স্টোর থেকে নেয়ার ট্রাই করুন।একটু কষ্ট হবে, তবে ভ্রমনে গিয়ে কষ্ট না করলে মজা নাই।এয়ারপোর্টে সিমের দাম ২/৩ গুন বেশী থাকে,আর কম মেয়াদের প্যাকেজ পাওয়া যায় না নরমালি।সেখানে অফিসিয়াল স্টোর থেকে আপনি ১ দিনের ও প্যাকেজ পাবেন তাও সাশ্রয়ী মূল্যে।
ইন্টারনেট থাকলে আপনার চলাফেরা করা সহজ হবে।খুব সহজেই আপনি আপনার ডেস্টিনেশন খুজে পাবেন।আপনি যাষ্ট গুগল ম্যাপে গিয়ে লিখবেন tourist attraction near me আর গুগল সাথে সাথেই আপনাকে আপনার আশেপাশে ঘোরার মত জায়গা সাজেষ্ট করে দেবে।
***** কারেন্সি
এয়ারপোর্ট থেকে কিছুই করবেন না।আর যে দেশ থেকে যাবেন সেখান থেকে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করলে রেট সবসময়ই কম পাবেন।যে দেশে যাবেন তাদের দরকার ডলার তাই তাদের চেয়ে বেশী রেট কেউ দিতে পারবে না।
আর এক্সচেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো হচ্ছে বেষ্ট তাও যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। একেক দোকানে একেক রেট থাকে, ঘুরে ঘুরে রেট যাচাই করার ক্ষেত্রে সরমের কিছুই নাই।
***** ভাষা
অন্য দেশে ট্রাভেলিং করা ক্ষেত্রে এডভান্টেজ পাওয়ার জন্য লোকাল কিছু বেসিক সেনটেন্স শিখে রাখা ভাল।লোকাল ভাষায় সালাম, গুড মর্নিং ইত্যাদি বললে সেদেশের মানুষ এমতেই খুশী হয়ে যায়।এতে করে হতেও পারে বিভিন্ন জায়গায় আপনি ডিসকাউন্ট পেয়ে গেলেন।
বা দ্যা ভাষা উম,এ,আহা এগুলা না বইলা গুগল ট্রান্সলেট ইউজ করার ট্রাই কইরেন।
***** আরো কিছু কথা
১. যে দেশে যাবেন তাদের চার্জিং সিস্টেম জেনে যাবেন। যেমন জাপানে আপনি তিন- পিনওয়ালা চার্জার ছাড়া ফোন চার্জ দিতে পারবেন না।
২.লোকাল মার্কেট কোথায় আছে সেগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারেন,যেখান থেকে আপনি কম দামে মার্কেটিং করতে পারবেন।
৩.বিদেশে যাওয়ার আগে ইভিসা কপি ২ টা সাথে করে নিয়ে যাওয়ার ট্রাই কইরেন।
৪.নরমালি হোটেল বুকিং এর হার্ড কপি লাগে না তাও এক কপি সাথে রাখতে পারেন।
৫.হোটেল বুকিং এর জন্য ????????????????????????????/???????????????????? ইত্যাদি থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই হোটেল বুকিং দিতে পারবেন।
৬.খালি পানির বোতল রাখার চেষ্টা করুন – জীবন মানেই পানি তবে এই পানির বোতলের দাম সব দেশেই বেশী।
৭.পাওয়ার ব্যাংক খুবই ইম্পর্টেন্ট একটা জিনিস।
৮.ভিসা/অন্যান্য সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করুন, যদি সম্ভব হয়।এতে খরচ যেমন কমে যাবে তেমন অভিজ্ঞতাও বাড়বে।
৯.নাইট-ক্লাবে যাওয়া বাদ দিতে হবে।অনেক অনেক মানুষ দেখি যারা লুকায়ে লুকায়ে হলেও নাইট ক্লাবে যায়, এসবে গেলে খরচ তো হবেই।
১০.দূর যাত্রার ক্ষেত্রে নাইট বাস/ট্রেন ব্যবহার করতে পারেন।এক্ষেত্রে এক রাতের হোটেল ভাড়া বেচে যাবে।
১১.গুগল/???????????????? ???????????? ব্যবহার করা শিখুন।আপনি যাষ্ট প্রশ্ন করবেন আর এরা আপনাকে সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিয়ে দেবে।
১২. ????????????????????,???????????????????????? কমিউনিটি ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন ধরনের তথ্য খুব সহজেই নিতে পারেন।
১৩.???????????????????????????????????????????????? এপ্স ইউজ করতে পারেন, যদিও এখন এই এপ্স পে মডেল ইউজ করে।আমি ইন্দোনেশিয়াতে ফ্রিতে একজনের বাসায় ছিলাম ২০১৯ এর দিকে।
আরো অনেক কিছু আছে যেটা আপনি সাহস করে একা ঘুরতে বের হলে আস্তে আস্তে শিখে যাবেন।আসলে অভিজ্ঞতা কাউকে শিখেয়ে দেয়া যায়না।এখানে যত কথা বলেছি তা শুধুই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, হয়তো সব কথা এত অল্প লেখায় বলা সম্ভব হয়নি।আপনার যদি আরো কিছু জানার আগ্রহ থাকে তাহলে কমেন্ট করে বলতে পারেন আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো উত্তর দেয়ার।